যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কানাডা যদি ‘স্বতন্ত্র কিন্তু অসমান রাষ্ট্র’ হিসেবে থেকে যেতে চায়, তবে তাকে তার প্রস্তাবিত গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে হলে ৬১ বিলিয়ন (৬ হাজার ১০০ কোটি) মার্কিন ডলার গুণতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, কানাডা এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে ‘অত্যন্ত আগ্রহী’। তবে যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হয়ে যায়, তাহলে এক টাকাও খরচ করতে হবে না।

ট্রাম্প লেখেন, তারা যদি আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্য হয়ে যায়, তবে খরচ হবে শূন্য ডলার। তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে! ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি কানাডা। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আগে স্বীকার করেছিলেন, গোল্ডেন ডোম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা ‘উচ্চপর্যায়ের’ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

গোল্ডেন ডোম বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং এটি তার বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা এই সময়সীমা ও বাজেট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’-এর মাধ্যমে অনুমোদনের চেষ্টা চলছে, যা গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে অল্প ভোটে পাস হয়েছে এবং এখন সিনেটে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি ইসরায়েলের আয়রন ডোম ব্যবস্থার আদলে নির্মিত, যার রক্ষণাবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। তবে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশাল দেশজুড়ে এই ব্যবস্থা কীভাবে কার্যকর করা যাবে। কারণ ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির মতো ছোট একটি রাজ্যের আয়তনের সমান। এ ছাড়া আয়রন ডোম মূলত স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি

চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া এরই মধ্যে ট্রাম্পের মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, এই পরিকল্পনা ‘মহাকাশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ঝুঁকি তৈরি করছে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, গোল্ডেন ডোম প্রকল্প কৌশলগত স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে দুর্বল করছে এবং এটি প্রকৃতপক্ষে প্রথম হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার পথ তৈরি করছে। উত্তর কোরিয়া একে ‘মহাকাশকে সামরিকীকরণের উন্মাদনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *