৫আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। ইতিহাসে নাড়া দেয়ার মতো এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সারাদেশের মতো মৌলভীবাজার জেলার মানুষও পেয়েছে স্বস্থির নিঃশ্বাস। ঠিক এর দু’সাপ্তাহ পর জেলায় দেখা দেয় বন্যার প্রার্দুভাব। জেলা জুড়ে তৃতীয় দফায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে যখন সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত ঠিক তখনই যেন মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো আরেক দুর্ভোগ হাজির হয়েছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রায়। একদিকে দ্রব্য মূল্যে’র সীমাহীন ঊর্ধ্বগতী, আরেকদিকে পল্লী বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিলের খড়গ। অবশ্য এটি নতুন কিছু নয়, পল্লী বিদ্যুতের ভুতুরে অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ গ্রাহক পর্যায়ে অনেক পুরনো। তবে এবার অতীতের সব অভিযোগের মাত্রা পেরিয়ে গেছে। অস্বাভাবিক বিলে বেড়েছে গ্রাহকদের ক্ষোভের মাত্রা। সূত্র থেকে জানা যায়, চলতি আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক বিলের খড়ক নেমেছে জেলা সদর ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। কয়েকদিন আগে গ্রাহকরা জানতে পারেন, গত জুলাই মাসের থেকে চলতি আগস্ট মাসে বিল এসেছে অস্বাভাবিক পর্যায়ে। কোন কোন গ্রাহকের জুলাই মাসের বিল এসেছে যেখানে ১ হাজার ৫শত টাকা সেখানে তিনগুণ বেড়ে আগস্ট মাসে এসেছে ৪ হাজার ২শত টাকা বা জুলাই মাসে যার এসেছে ৫শত টাকা সেখানে আগস্ট মাসে চারগুণ বেড়ে বিল দাড়িয়েছে ২হাজার ৪শত টাকারও বেশি। এভাবেই অসংখ্য গ্রাহকের বিলে দেখা গেছে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে বিল এসেছে ৩ থেকে ৪ গুন পর্যন্ত বেশী। বিলের এই অসামাঞ্জস্যতার সত্যতা অনেক গ্রাহকের বিলের কপি থেকে পাওয়া গেছে। অভিযোগের সমাধান পেতে প্রতিদিনই ভুক্তভুগি গ্রাহকরা ভিড় জমাচ্ছেন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ে। সেখানে অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ নিয়ে গেলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মকর্তারা বলছেন মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল করা হয়েছে। অথবা মিটারে সমস্যা। তবে গ্রাহকরা বলছেন মিটার না দেখেই বিল রাইডাররা ভুল রিডিং তুলে আনছেন। অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ব্যবস্থা নিতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদর উপজেলার পাগুরিয়া গ্রামের তোয়াহিদ মিয়া। অভিযোগে এই গ্রাহক উল্লেখ করেন, তার ঘরে ৪টি বাতি ও ২টি ফ্যান চলে। যাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাস থেকে ব্যবহারের পরিমাণে অতিরিক্ত কল্পনাতীত বিল আসছে। তাতে মে মাসে ৩ হাজার ৭শত, জুনে ৪ হাজার ৮শত ৫৮ এবং জুলাই মাসে ১ হাজার ৬শত ৫৯ টাকা বিল এসেছে। এই অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জরুরী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন এই গ্রাহক। শুধু তোয়াহিদ মিয়া নয়, এমন অনেক অভিযোগই প্রতিদিন আসছে এই কার্যালয়টিতে। চলতি মাসের ২৫ আগস্ট সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ে অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ নিয়ে গেলে কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের মিটার পরিক্ষা করে সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিবেশ শান্ত হয়। অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি ম্যানেজার (ডিজিএম) জিয়াউল হক বলেন, রিডিং অনুযায়ী বিল করা হয়েছে। অস্বাভাবিক বিল এসে থাকলে মিটারে সমস্যা থাকতে পারে। যারা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমরা সমাধান করে দিয়েছি। উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলায় পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহক রয়েছেন ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮শত ৬১ জন। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৭৫ হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন স্বায়ত্বশাষিত এই প্রতিষ্ঠানটির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *