স্টাফ রিপোর্টারঃ চা শ্রমিক-আদিবাসী শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ

সচেতন নাগরিক সমাজের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার (১৪ মে ২০২৪) বিকেলে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল এ দাবী করেন।

লিখিত বক্তব্যে ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, “এই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় আদিবাসী এই শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। সে বিষয়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের জন্য সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল ১৩ মে এবং আজ ১৪ মে মৌলভীবাজারের মিরতিংগা এবং মুরইছড়া চা বাগান পরিদর্শন করি। সেখানে আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা শিশুশ্রমিক খুশি উরাং ও দুর্গামনি বাউরির সঙ্গে কথা বলি। মৃত শিশুশ্রমিক প্রীতি উরাং এর মা-বাবা এবং অন্য শিশুদের পরিবারবর্গের সঙ্গে কথা বলেছি। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি। বিষয়গুলি দেশবাসীকে জানানোর জন্য আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সৈয়দ আশফাকুল হকের মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে দুটি শিশু পড়ে যায় বা লাফ দেয়। পরপর ঘটে যাওয়া একই রকমের দুটি ঘটনা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে।

১. প্রীতির মা বাবার সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, তারা অভাব এবং ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।

২. মৃত্যুর সময়েও প্রীতির মাসিক শুরু হয়নি, ফলে তার বয়স ১৫ বছর হবার কোনো কারণ নেই। এজাহারে বেশি বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. দুর্গামনির স্টেটমেন্টে এটা স্পষ্ট হয়েছে, যে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতো নিয়মিত।

আমাদের দাবি:

১. ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের কাজের পারিশ্রমিক, চিকিৎসা খরচ এবং পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. প্রীতির এবং অন্য শিশুদের ওপরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রীতির এবং দুর্গামনির পরিবারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সেইসাথে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. শিশুশ্রম বিষয়ক নীতিমালাকে আইনে পরিণত করার জোর দাবি করছি। শ্রমে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ১৪ বছরের পরিবর্তে ১৮ বছর করার দাবি করছি সরকারের কাছে। সেই সাথে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালায় গৃহে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ১৪ বছরের পরিবর্তে ১৮ বছর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

৫. ২০১৭ সালে আদালেতের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিযে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সারাদেশে মনিটরিং সেল গঠনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা অবিলম্বে কার্যকরের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে গৃহ শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, এএলআরডি’র ব্যবস্থাপক রফিক আহমেদ সিরাজী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, অনুবাদক ও গবেষক মুহাম্মদ হাবীব, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সাংবাদিক বহ্নি ফারহানা, দৃক-এর গবেষক সামিয়া রহমান প্রিমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিংহ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *