নানা গুণে ভরপুর হাতিশুঁড় গাছ

নামটা শুনে অন্যরকম মনে হয়—গাছের নাম ‘হাতিশুঁড়’। পুরোনো দালান ঘেঁষে কিংবা রাস্তার ধারে অন্য আগাছার মাঝে এ গাছটি দেখা যায়। এ গাছের বাঁকানো পুষ্পদণ্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল। গজদন্ত অর্থাৎ হাতির দাঁতের মতো শুভ্র এই ফুল।

গাছটি আগাছার সঙ্গে এখানে-সেখানে জন্মায়, তাই সাধারণের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। মোটামুটি এক-দেড় ফুট লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড ফাঁপা, নরম। সারাদেহে ছোট ছোট রোম আছে। গাছের ওপরের দিকের কাণ্ড চৌকো, নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত গোলাকার।

এর সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী। বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum এবং ইংরেজিতে ‘Indian heliotrope’ বলা হয়। হাতিশুঁড়ি, হাতিশুণ্ডি, হস্তিশুণ্ডি, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডি ইত্যাদি স্থানীয় নামেও পরিচিত। হাতিশুঁড় Boraginaceae পরিবারের অর্ন্তভুক্ত।

এতে সারাবছরই ফুল ফোটে। তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। গর্ভাশয় চারখণ্ডিত। ফল ও বীজ ছোট। এই উদ্ভিদে ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন এলকালয়েড্স ও হেলিওট্রিন নামক নানারকম জৈব উপাদান পাওয়া যায়। পাতা খসখসে, একের বিপরীত অন্য পাতাটির অবস্থান। ডালের নিচের দিকের পাতা বড়, পত্রবৃন্ত লম্বা। বড় পাতাগুলো দেখতে বর্শার ফলার মতো। পাতাগুলো আঙুল দিয়ে ঘঁষলে গন্ধ পাওয়া যায়।

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা

১. বিষাক্ত কোনো পোকার কামড়ে শরীরের কোনো স্থান ফুলে গেলে এবং সে স্থানে জ্বালাপোড়া হলে এ উদ্ভিদের পাতা বেটে রস লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

২. আঘাতজনিত ফোলায় পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালে ফোলা এবং ব্যথা কমে যায়।

৩. ঠান্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে বা বাগী ফোলা অর্থাৎ উরু ও তলপেটের মাঝখানে, কুচকির ডান ও বাম দিকে যে কোনো দিক ফুলে গেলে এ গাছের পাতা বেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগালে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

৪. দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়।

৫. কোনো কারণে চোখ টকটকে লাল হলে, কড় কড় করছে, মনে হচ্ছে বালি পড়েছে—এমনটা হলে হাতিশুঁড় গাছের পাতার রস অব্যর্থ ওষুধ।

৬. সর্দি লাগলে এর পাতা ছেঁচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেলে সর্দি ভালো হবে।

৭. অ্যাকজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুঁড় গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে দিলে কিছুদিন ব্যবহারে অ্যাকজিমা সেরে যাবে।

৮. টাইফয়েড রোগে এর পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান। পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়।

৯. দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাতিশুঁড়ের মূল চিবালে মাড়ি ফোলা কমে যায়।

১০. ব্রণ হলে বা এর দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না।

১১. জ্বর ও কাশিতে এই গাছের মূল পানির সঙ্গে ফুটিয়ে ব্যবহার করা হয়।

১২. কাটা, ছেঁড়া ও আঘাত প্রশমনে এই গাছের ব্যবহার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *