সিলেটজুড়ে ফাঁদ: ১২ লাখ টাকায় কানাডা যাওয়ার নিশ্চয়তা
সিলেট প্রতিনিধি: নেপাল থেকে পাসপোর্টে লাগবে কানাডার ভিসা। কানাডায় পৌঁছার পর দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। বাকি ৭ লাখ কাজ করে পরিশোধ করবেন। আর যেতে না পারলে নেপাল যাওয়ার খরচও ফ্রি। এমন লোভনীয় অফারে যে কেউ হতে পারেন লোভাতুর। কিন্তু এই লোভের ফাঁদে পড়ে অনেককে হারাতে হচ্ছে সর্বস্ব। নেপালে তৈরি হয়েছে মানবপাচারের নতুন এই রুট। এই চক্রে আছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের দালালরা। সম্প্রতি দালালদের ডেরা থেকে সিলেটের তিন যুবক ফিরে আসার পর পাওয়া গেছে এমন তথ্য। সিলেট থেকে ওই চক্রের এক সদস্যকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দালাল চক্রের এমন ফাঁদে পা দিয়েছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের ফুলসাইন্দ নাযাত টিল্লার শাহরিয়ার রহমান, দক্ষিণ সুরমার কুচাইয়ের হাফিজুর রহমান ও মোমিনখলার এমএ মান্না। গত ১৩ অক্টোবর দালালদের মাধ্যমে নেপালে যান এই তিন যুবক। নেপাল পৌঁছার পর দ্বিতীয় দিন তাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায় দালালরা। আর তৃতীয় দিন হোটেল থেকে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে দালালরা তাদেরকে আটকে রাখে। এরপর শুরু হয় টাকার জন্য নির্যাতন।
নেপালে জিম্মি যুবকরা পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দিয়ে কানাডায় পৌঁছার খবর দেয়। তারা ওই চক্রের সদস্য সিলেটের মিরাবাজারের মিজানুর আমিনের কাছে ৫ লাখ টাকা দিতে বলে। এভাবে নানা কৌশলে তিন যুবকের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা নিয়ে যায় চক্রটি। পরে মিজানুর আমিন গ্রেফতার হলে নেপালে মুক্তি পান তারা। চক্রটিতে বাংলাদেশি, ভারত ও নেপালী দালাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
পাচারের শিকার শাহরিয়ার রহমানের খালাতো ভাই হুমায়ূন কবীর লিটন জানান, নেপালে যাওয়ার তিনদিন পরই ওই তিন যুবককে নিয়ে জিম্মি করে মানবপাচারকারী চক্র। তাদের পাসপোর্টে কানাডার ভুয়া ভিসা লাগিয়ে ভিডিও করে দেশে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে।
লিটন জানান, নির্যাতনের এক পর্যায়ে শাহরিয়ারসহ তিন যুবককে দিয়ে কানাডার একটি ফোন নাম্বার দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দেওয়ায় চক্রটি। তখন যুবকরা ফোন করে জানায় তারা কানাডা পৌঁছে গেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপাতত ৫ লাখ টাকা মিরাবাজারের মিজানুর আমিনের কাছে দিতে। এমন সংবাদ পেয়ে তিন যুবকের পরিবার প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়ে দেন। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন তাদের সন্তানরা পাচারকারীদের কবলে পড়েছেন।
লিটন আরও জানান, পাচারের বিষয়টি বুঝার পর ২১ অক্টোবর তিনিসহ কয়েকজন মিলে মিজানুরের বাসায় যান। শাহরিয়ারকে কানাডায় তাদের পরিচিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিলে এখনই ১২ লাখ টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু মিজানুর টালবাহনা শুরু করে। সে ফোনে এক ভারতীয় ও নেপালীর সাথে কথা বলে। ভারতীয়কে সে আগারওয়াল ও নেপালীকে শর্ম্মাজী বলে সম্বোধন করছিল। পাচারের বিষয়টি টের পেয়ে শাহরিয়ার বাবা সরফ উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ২৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে মিজানুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে নেপাল বিমানবন্দরের পাশে একটি গাড়ি থেকে ওই তিন যুবককে ফেলে যায় মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা দেশে ফিরেছেন।
মানবপাচারকারী চক্রের তৎপরতা প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার, এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সিলেটে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এরকম আরও চক্র আছে। পুলিশ এদেরকে সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
