দুর্বার সংবাদ ডেস্ক: চাকরি হারিয়ে শোজি সে সময় নিজের একটি ওয়েবসাইট খোলেন। সেখানে জানান, যাঁর যা প্রয়োজন, অর্থের বিনিময়ে তিনি সেটিই করতে প্রস্তুত। বেশির ভাগ মানুষ শোজির কাছে কী চেয়েছে জানেন? কেবল সঙ্গ! যেমন এক ম্যারাথন রানারের জন্য ফিনিশিং লাইনে অপেক্ষা করেছেন শোজি। তাঁর কাজ ছিল ম্যারাথন শেষে তালি দেওয়া, অভিনন্দন জানানো। এক নারী তাঁকে প্রথমবার ভাড়া করেছিলেন পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কেননা পার্টিতে গিয়ে তাঁর খুবই একা লাগে। এরপর শোজি বেশ কয়েকবার ওই নারীর সঙ্গে পার্টিতে ও নানা জায়গায় গেছেন। অনেকেই শোজিকে ভাড়া করেছেন একসঙ্গে কেক বা কফি খেতে, গল্প করতে। একবার এক নারী শোজিকে এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করেছিলেন স্রেফ তাঁর পাশে বসে থাকার জন্য। সে সময় তিনি ডিভোর্স পেপারে সই করেন। অনেকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে শোজি তাঁদের ছবি তুলে দিয়েছেন। ভিডিও করেছেন। শোজি জানান, কোন কাজের জন্য কত টাকা দেবেন, তা কাস্টমাররাই ঠিক করেন। অনেক সময় তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে কাস্টমাররা নির্ধারিত টাকার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন। শোজি আরও জানান, সময়ের সঙ্গে তাঁর চাহিদা কেবলই বাড়ছে। এখন থেকে যাঁরা বেশি টাকা দেবেন, তিনি তাঁদেরকেই সেবা দেবেন।

রেস্তোরাঁয় এক ক্লায়েন্টকে সঙ্গ দিচ্ছেন শোজি

রেস্তোরাঁয় এক ক্লায়েন্টকে সঙ্গ দিচ্ছেন শোজিছবি: শোজি মোরিমোতোর অ্যালবাম থেকে

একবার শোজিকে ১৭ ঘণ্টার জন্য ভাড়া করেছিলেন এক ব্যক্তি। ট্রেনে করে সর্বশেষ গন্তব্যে গিয়ে আবার ফিরে আসা, এই ছিল কাজ। পুরোটা সময় শোজি তাঁর ক্লায়েন্টের কথা শুনেছেন। এভাবে অনেকেই শোজিকে ভাড়া করেন কেবল নিজের জীবনের নানা গল্প শোনানোর জন্য। শোজি সেসব কথা মন দিয়ে শোনেন। সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাত বছর বয়সী ছেলের বাবা শোজি বলেন, ‘এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যা খুব সহজ ছিল না। অচেনা মানুষের সঙ্গে পার্টিতে যাওয়া, রোদে বা বরফে দাঁড়িয়ে থাকা…অচেনা মানুষের জন্য চিৎকার করা, চুপচাপ মানুষের কথা শোনা একেবারে সহজ কাজ নয়। তবে এসব আনন্দের সঙ্গে করেছি। কেননা এটাই আমার কাজ। আমি যথেষ্ট উপার্জন করেছি আর আমার পরিবারের পাশে থেকেছি। দিন শেষে আমি সুখী।’

জাপানে জন্মহার বেশ কয়েক বছর ধরে কমছেই। যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার বাড়ছে। এখন সেখানকার তারুণ্যের একটা বড় অংশ বিয়ে করে একক পরিবার গঠন করতেও রাজি নন। ঘরে ঘরে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে, তবে একাকিত্ব দেখা দিচ্ছে বড় সমস্যা হিসেবে। এমন বাস্তবতায় মানুষকে সঙ্গ দেওয়ার মতো মানুষ সরবরাহ করার জন্য রীতিমতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে জাপানে। জাপানিদের একাকিত্ব কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে চলছে একাধিক গবেষণা। শোজির ব্যাপারে নমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরামর্শক আই সাকাতা বলেন, ‘জাপানিদের যেটির অভাব, শোজি সেটিই সরবরাহ করছেন। জাপানিদের মধ্যে এখন যাঁরা ভালোবাসা বা সঙ্গী খুঁজছেন না এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়াতে চান না, তাঁরা এ ধরনের সেবাই চাইছেন। যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একটি মৌলিক শর্ত হলো, তাদের পণ্য বা সেবার মাধ্যমে প্রয়োজন মেটাতে হবে, সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি (শোজি) আধুনিক চিন্তা করেছেন আর নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *