শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: দুর্বার সংবাদ/

আগামীর বাংলাদেশকে তরুণদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রাম করেও স্বৈরাচারকে তাড়াতে পারিনি। আমি গর্বিত আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করে দেখিয়েছে। আল্লাহর সাহায্যে অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতে তুলে দেব। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুল মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো শাহেদ আলী।

বক্তব্যে জামায়ত আমির স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, জাতির পক্ষ থেকে তাদের স্যালুট জানাচ্ছি। সন্তানদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আজকে যুবকরা বলছে আমাদের ভোট চুরি করেছিল। তিনটা নির্বাচন, আজ যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর; তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। তারা ভোটের, গণতন্ত্রের কবর রচনা করল। এদের বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। প্রত্যেকটা অন্যায় অপরাধের বিচার করতে হবে। জাতিকে এরা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি শক্তি, মাইনরটি শক্তি, কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা- তার ইয়ত্তা নেই। কারণ একটা জাতিকে যখন টুকরা টুকরা করা যায়, তখন তাদের গোলাম বানানো সম্ভব। এরা ধরে নিয়েছিল তারা দেশের মালিক, আমরা সবাই ভাড়াটিয়া।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির শফিকুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ব্যাংক, বিমা, আর্থিক খাত লুটেপুটে শেষ করে দিয়ে, এই দেশের মানুষের গচ্ছিত আমানত সবকিছু গিলে ফেলে নিজেরা পালানোর আগে সবকিছু বিদেশে পাচার করেছে। পালায় কারা? সন্ত্রাসী, অপরাধীরা। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা পালায় না। গালভরা বুলি দিয়েছিলেন সেই চোর–ডাকাতের লিডার, “আমি অমুকের মেয়ে, আমি পালাব না”।’ জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘তিনি যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনারা (প্রতিবেশী) পাকঘরে (রান্নাঘর) কী পাকাবেন, আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, ভালো। আপনাদের নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। আপনারা সেখানে (প্রতিবেশী দেশ) যাদেরকে মাইনরিটি বলেন, তাদের সঙ্গে কী আচরণ করেন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবক দিতে হবে না। যুগ যুগ ধরে এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা কোনো দুষ্কৃতকারীকে এ দেশে কোনো মতলব হাসিল করতে দেব না। আমাদের দেশে কোনো মেজরিটি, মাইনরিটি নেই। এ দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। এটা আমরা চাই না, দেশে একটা পরিবর্তন হলে বিভিন্ন উপাসনালয়ে পাহারা বসাতে হবে। এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, মঠ কিছুই পাহারা দিতে হবে না। মানুষের বিবেক সবকিছুকে পাহারা দেবে।’

জামায়াতের ওপর আওয়ামী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যেখানে আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে খুন করা হয়েছে, সবগুলো অফিস তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, আমাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বেদিশা হয়ে শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ পর্যন্ত করা হয়েছে। এত যন্ত্রণা বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা বলেছি দেশকে ভালোবাসি, মানুষকে আমরা ভালোবাসি। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা একটা সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বৈষম্যকে নির্বাসনে পাঠাব। আমরা মেধার স্বীকৃতি প্রদান করব, পলিটক্রেসি নয়, মেরিটক্রেসির ভিত্তিতে জাতি গঠন করব। যুবকদেরকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে তাদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করব।

চা শিল্প রক্ষার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে দেশের সবেচয়ে বেশি চা বাগান। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে নিয়ত সঠিক করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *