স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনাকে মহাস্বৈরাচার বানানোর পেছনে মিডিয়া কম দায়ি নয়। শেখ হাসিনা সরকারের সময় মিডিয়া সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। মিডিয়া সমাজের আয়না হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও সেটি করেনি। পতিত সরকারের সময়কার খুন, গুম ও আয়নাঘরের মতো নির্যাতনশালার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে শেখ হাসিনা মহাস্বৈরাচার হওয়ার সুযোগ পেতেন না। অনেক সাংবাদিক সত্য প্রকাশ না করে শেখ হাসিনাকে তোষোমোদী করেছেন। তাকে আন্তর্জাতিক নেত্রী সম্বোধন করেও কেউ কেউ তোষামোদ করেছেন। এটা সৎ সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে না। এ দায় আমরা এড়াতে পারি না। সাংবাদিকরাই এদেশের সাংবাদিকতা রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন ঐক্য।

২৬ আক্টোবর শনিবার বিকেল ৩টায় সিলেট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএফইউজে’র সভাপতি  সদ্যপ্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী স্মরণে নাগরিক শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (এসএমইউজে) এই  অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বলতে কিছুই ছিল না। ফলে মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩। তিনি আরও বলেন, রুহুল আমিন গাজী আমৃত্যু সাংবাদিকদের অধিকার ও দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। তার আদর্শ লালন করে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।  সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক জুবেরের সভাপতিত্বে ও এসএমইউজের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিইউজে’র সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের আহবায়ক ডা. শামীমুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমইউজে’র  সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা শাহ মো. নজরুল ইসলাম।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদি সরকার আমাদের ছোট শিশু-কিশোরগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তখন আরমা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছিলাম, যেখানে ৪ হাজারের বেশি পেশাজীবী জড়ো হয়েছিলেন। সেদিন রুহুল আমিন গাজী বলেছিলেন আমাদের গুলি করো। আজ ফ্যাসিবাদি সরকার পালিয়েছে। হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু রুহুল আমিন গাজী নেই। রুহুল আমিন গাজী ৪৫ বছর ধরে দাবি আদায়ে সংগ্রাম করে গেছেন। এক মুহুর্তের জন্য সরেননি। আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সঠিক সাংবাদিকতা করে গেছেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীদের সফল হতে দেওয়া যাবে না। কলঙ্কের কোনো মালা যেনো পরতে না হয়, সেজন্য বর্তমান সরকারকেও সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। যাতে জনগণ বিরূপ না হয়। বর্তমান সরকার ব্যর্থ হোক সেটা আমরা চাই না। কিন্তু চারপাশে ফ্যাসিবাদের দালালরা আছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সত্য প্রকাশের সাংবাদিক। ফ্যাসিবাদি সরকার তাকে একটানা দেড়বছর জেল খাটালেও আপোষ করেননি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আন্দোলন করে গেছেন। যখনই স্বৈরাশাসন ও ফ্যাসিবাদি সরকার এসেছে, তিনি রাজপথে নেমেছেন। দেশ যখন মুক্ত বাতাস বইছে, তখন তিনি চলে গেছেন। এই সময়ে তার খুবই প্রয়োজন ছিল।

বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রুহুল আমিন গাজীর মারাত্মক কিডনির সমস্যা ছিল। এরপরও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার তাকে গ্রেফতার করে ১৮ মাস জেলে রাখে। সেখানে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এজন্য স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার এবং ওই সময় দায়িত্বপালন করা কারাগারের জেলার ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উচিত। তাদের গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে। ডিউজে সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী ভাই নেই, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তাকে চিনি। তিনি ছিলেন একজন অসীম সাহসী নেতা। প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের আগের দিনও তিনি অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবীর ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আব্দুল কাদের তফাদার, দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো প্রধান কবির আহমদ, এসএমইউজ’র সদস্য শাহজাহান সেলিম বুলবুল ও শাবিপ্রবি’র বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা দেলোয়ার হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *